KANCHER CHURI

কাঁচের চুড়ি

স্বর্ণালী যাস না, দাঁড়া একটু আমি আসছি দীপ বললো।স্বর্ণালী কথা শোনে না দৌঁড়ে চলে সম্মুখে। সে শুনতে পাচ্ছে না আজ কিছু। তবুও দীপ পিছনে পিছনে
দৌঁড়াতে থাকে।ছোট্ট স্বর্ণালী দশ বছরের আর দীপ এগারো। দুজনে খুব ভাব, একে অপরকে ছাড়া বাঁচে না।
ওরা বন্ধু আবার অনেক দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও বটে।
ছোট থেকে পুজোর ছুটি, গরমের ছুটি পড়লে সব খুব
হই হই করে মামা বাড়ি বেড়াতে যেতো।ওদের দুজনের
ই ছোট ছোট দুটি ভাই অর্ঘ আর জয়, মামা বাড়িতে মামা আর মাসির মেয়েরা,রিনি, রাখি আর তমালি উফ দারুন একটা টিম, মজার টিম। তারা ওই ছুটির কদিন যা খুশি করতে পারতো, পুরো পুরী স্বাধীনতার স্বাদ।
হ্যাঁ সত্যিই তাই কোনো বাঁধা নেই, নেই কোনো বারণ।
একদম মামা বাড়ির আবদার। মামা, মামী দিদা দাদু
সবার কাছে আদর । বিশেষ করে পুজোর সময় গুলোতে
প্রচুর টাকা জমা হয়, যা খুশি কেনা, আর যা খুশি খাওয়া আর খুব আনন্দ করা। সব মিলে দারুন মজা,
সব মিলে সম বয়সী প্রায় সাত আট জন এক সাথে হলে
তারা কি না পারে…. যথারীতি এখানে ও তার ব্যাতিক্রম
হলো না। বছরে দুবার স্বর্ণালীরা একদম অপেক্ষা করে থাকতো। একসঙ্গে ঘোরা, একসঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাওয়া, একসঙ্গে খাওয়া সব কিছু অসম্ভব এক আনন্দ
মুহূর্ত । যাইহোক স্বর্ণালী ছোট বয়সে ও খুব বুদ্ধিমতী, সে
জানতো কিভাবে অন্যের মন জয় করতে হয়, মিষ্টি করে
বড়ো দের সঙ্গে কথা বলা সঙ্গে ঠোঁটে মিষ্টি হাসি সর্বক্ষণ
টুকটুকে ফর্সা রং আর তার স্বভাব খুব সহজে অন্যের
মন জয় করে নিতো। ওইটুকু ছোট বয়সে ও সে যথেষ্ট
পরিণত। দীপ ও স্বর্ণালী, আর তাদের অনন্য ভাই বোনেরা সবাই মিলে খুব হইচই করতো, আবার মাঝে মাঝে ঝগড়া হয়ে কথা ও বন্ধ হয়ে যেতো, আবার খানিক বাদে সব ঠিক। এটাই ছোট বেলার মজা, অতি
সহজে সব ভুলে যেতো সবাই। তখন কার দিনে গ্রামের
পরিবেশ ছিল অন্যরকম পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ানো
আর সবার গাছ থেকে ফল টল পেড়ে খাওয়া সে মজাই
আলাদা।
একবার একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো দুপুরে সবাই ঘুমিয়ে
পড়ার পর স্বর্ণালী রা সবাই মিলে বেরিয়ে পড়ল পাড়া
ঘুরতে, শীতের বিকাল সুন্দর মিষ্টি রোদ্দুর ওরা ঘুরতে ঘুরতে একটি পুরানো খুব পুরানো বাড়ির কাছে চলে
  • এলো একদম পোড়ো বাড়ি যাকে বলে, দোতলা বাড়ি
কিন্তু কোনো লোক নেই ।বাড়ির সঙ্গে একটি লাগোয়া বাগান রয়েছে ফলের, নানা রকম ফলগাছ রয়েছে।
আম, জাম, বাতাবি লেবু,সবেদা নারকোল সুপারি
আরো কত কি গাছ।কিন্তু এত গাছ হওয়ার জন্য
বেশ অন্ধকার ছিল। দিনের বেলাতেও ভালো করে
সূর্য্যের আলো ঢোকে না, বেশ গা ছম ছমে ব্যাপার।
ওরা বাড়ির মধ্যে ঢোকার রাস্তা খুঁজতে লাগলো, কেউ বলে এদিক থেকে তো কেউ বলে ওদিক থেকে। অবশেষে একটি ভাঙা দেওয়াল টপকে এক এক করে
সব ঢুকে পড়ল, ঢুকে তো পড়েছে এবার ওরা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওই করছে আর ভাবছে কোথায় এসে পড়েছে। একটা ভুতুড়ে অন্ধকার বাড়ি, ওরা গাছ
থেকে কুল ,পেয়ারা, সবেদা যার যা খুশি পেড়ে খেতে লাগলো। এর মধ্যে ওরা যেন কিসের একটা শব্দ শুনতে
পারলো, কেউ বুঝতে পারছে না। আর অন্ধকার ও হয়ে এসেছে সবাই বলা বলি করছে কি করবে, তার মধ্যে দ্বীপ সবার বড় সেই বলে উঠলো চল সব আর এখানে
থাকা ঠিক হবে না। সবাই অবশ্য দ্বীপ এর কথা শুনতো,
ওরা বেরোতে যাবে সেই মুহূর্তে আবার সেই আওয়াজটা
শুনতে পেলো।এবার মনে হলো আওয়াজ টি আরো কাছ থেকে শোনা গেল,মনে হলো বাড়ির ভিতর থেকে
আসছে। দ্বীপ ওদের তাড়াতাড়ি বাইরে যেতে বললো
আর সে খানিকটা পোড়ো বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো
দেখার জন্য যে আওয়াজটা কথা থেকে আসছে।স্বর্ণালী
ওকে যেতে দেবে না, সে যথেষ্ট বুদ্ধিমতী পাছে বিপদ ঘটে সে তার থেকে দূরে থাকতে বলে দ্বীপ কে।
দ্বীপ সাহসী ছেলে, সে স্বর্ণালী র কোনো কথা না শুনে এগিয়ে যায় ভয়ে ভয়ে স্বর্ণালীরা সবাই বাইরে অপেক্ষা
করতে থাকলো। দ্বীপ ধীরে ধীরে ভিতরে ঢুকে পড়ল
আওয়াজটা লক্ষ্য করে সামনে এগিয়ে গেলো, কিন্ত
আশ্চর্য্য সে কিছুই দেখতে পেল না। কিন্তু আওয়াজটা
কোথা থেকে আসছিল ও বুঝতে পারলো না বেশি দেরি
করলো না কারন ওর সঙ্গে ওর ছোট ছোট ভাই বোন গুলি ছিল তাই ও দেওয়াল টপকে বাইরে চলে এলো।
কিন্তু কি যেন হলো ওর একটা বোধ হয় একটু ভয় পেয়েছিল, কিন্তু কাউকে কিছু বললো না তবুও স্বর্ণালী
বুঝতে পারলো। সেই দিনের পর থেকে তারা আর ওই
দিকটাই যায় নি। দ্বীপ কাউকে কিছু না বললে ও বুঝে
ছিল কিছু একটা আছে ওই পোড়ো বাড়ি টাই।
যাইহোক  কিছুদিন বাদে তারা সব ভুলে গেলো।
সেবারে, গরমের ছুটি তে পড়লো স্বর্ণালীর ছোট মামার বিয়ে বাস যাবে কোথায়, আনন্দের সীমা নেই।বড়ো রা ব্যস্ত তাদের মতো আর ছোট রা বাদমায়সই তে।বিয়ে বাড়ি মানেই হইচই । স্বর্ণালী র ছোট মামা ডাক্তার একটি  গভমেন্ট হসপিটালে চাকরি করে। যথারীতি খুব সুন্দরী বাবার একমাত্র মেয়ের সঙ্গে দেখেশুনে  তার ছোট মামার বিয়ে ঠিক হলো। বিয়ের দিন সকালে আনন্দএর পরিবেশ, আবার ব্যাস্ত তা। সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত, প্যান্ডেল মাইক জল সাজা, গায়ে হলুদ কত কি। একে একে সব শেষে বরযাত্রী যাওয়ার পালা,স্বর্ণালী দের অন্তত চার ঘণ্টা বসে বসতে হয়েছিল। যাই হোক সবনিয়ম মেনে বিয়ে বৌ ভাত সব শেষ। ছোটরা সব এখনো আনন্দ করছে, এর মধ্যে স্বর্ণালী র মাসির মেয়ে রিনি টা ছিলো খুব দুষ্টু  সে এদের থেকে একটু বয়সে বড়। সেদিন দুপুরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ওরা যথা রীতি চুপিচুপি পা টিপে টিপে একে একে বাইরে বেরিয়ে আসে। রিনি দি বললো আই একটা জিনিস দেখাবো
সবাই গভীর আগ্রহে রিনিদি কে অনুসরণ করছে, রিনিদি
ছাদের সিঁড়ি বেয়ে সবাই কে নিয়ে ছাদে চলে এলো।সেখানে দুটো ঘর বড়ো বড়ো একটা তাদের ছোট মামার , আর একটা সেজো মামার। তো রিনিদি সবাই কে ডেকে ছোট মামার ঘরের দিকে আসতে বললো।সব চুপ চুপ করে ওদিকটায় গেল। রিনিদি বললো একটি চালের বস্তা কে দেখিয়ে স্বর্ণালী কে বলল তুই আগে ওঠ
তারপর তোরা সব । তার সামনে ছিল একটি জানালা ছোট মামার ঘরের যেই না স্বর্ণালী চালের বস্তাটার উপর উঠেছে অমনি দেখতে পেলো ছোটো মামা মামী বিছানায়
শুয়ে আছে ওরা কিছু কথা বলছিল আর ছোট মামা একটা বই পড়ছে। এরপর একে একে বাদমায়সী বুদ্ধি
কেউর তর সইছে না, কি জানি হচ্ছে ঘরের মধ্যে, তো সব একসঙ্গে দেখতে গিয়ে হুড়মুড়িয়ে চালের বস্তা নিয়ে সব পড়েছে। আর মামা মামী ও আওয়াজ পেয়ে কে কে বলতে বলতে এগিয়ে আসছে, তখন সব ছুট, স্বর্ণালী দ্বীপ ওদের ভাই বোনেরা সব এক দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নীচে ওদের দিদা দাদুর ঘরের মধ্যে দিয়ে পালিয়ে একদম বাইরে। অকারনে সব হাসি আর মজা। সব থেকে সেদিন রিনিদির জন্য সব বিপদে পড়তো।পরে অবশ্য সন্ধ্যা বেলায় বকা তা রিনিদি কে খেতে হয়েছিল।
এই রকম ছোট ছোট মজা ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে তারা
সবাই বড়ো হচ্ছিলো।
তারই মাঝে হয়তো বা দ্বীপ আর স্বর্ণালীর সম্পর্ক টা একটু অন্য রকম হয়ে উঠছিল।মানে বেশি গল্প বেশি সময় একসঙ্গে কাটানো নানা অছিলায় হাত ধরতে চাওয়া এই সব ছোট ছোট পরিবর্তন তারা বুঝতে পারছিল।বেশিক্ষন না দেখা হলে মন খারাপ যাই হোক
ওরা বয়সে যথেষ্ঠ অপরিণত।একদিন হঠাৎ খেলতে খেলতে ওদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে গেল পুরো দল দু দিকে
ভাগ হয়ে গেলো।একদিকে স্বর্ণালী একদিকে দ্বীপ লিড
করতে থাকলো, তো ঝগড়া মধ্যেই দ্বীপ স্বর্ণালীর হাত চেপে ধরেছিল আর ওর হাতে কিছু কাঁচের চুড়ি ছিল সেগুলো পট পট করে ভেঙে গেল আর স্বর্ণালীর হাত থেকে রক্ত বেরোতে থাকলো। সারাহাত লাল হয়ে গেলো,
সে তো কান্না শুরু করে দিয়েছে আর দ্বীপ গেল ভয় পেয়ে। যে এখুনি বড়ো রা কেউ দেখলে রক্ষা নেই। সেদিন ওদের ঝগড়া তো শেষ হলো, কিন্তু মনের মধ্যে
একটা বিষণ্নতায় ভরে গেল দ্বীপের। সে ভাবতে পারিনি
ওই ভাবে স্বর্ণালীকে সে আঘাত করবে, নিজের অজান্তে
স্বর্ণালী ও খুব দুঃখ পেয়েছিল আর কেঁদেও ছিলো ।এর পর থেকে কি জানি ওদের আর বেশি দেখা হতো না, আর ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে উঠছিল ওরা।আর ওদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক আর হয়ে ওঠেনি। দ্বীপ এর বাবা চাকরি সূত্রে অন্য জায়গায় পোস্টিং নিয়ে নিয়েছ। স্বর্ণালী রা ওখানেই রয়ে গিয়েছিল।স্বর্ণালীর সঙ্গে দ্বীপের স্মৃতি হিসাবে যদি কিছু থেকে থাকে তো সেই কাঁচের চুড়ি র দাগ। যা স্বর্ণালী না চাইতেই পেয়ে গিয়েছিল।
জীবনে কিছু দাগ খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়, কিছু স্মৃতি যা
কখনো ভোলার নয়। এইভাবেই জীবন মানুষ কে সামনে দিকে এগোতে শেখায়।আর পিছনে পড়ে থাকে স্মৃতির সমাধি গুলো। যেখানে আর কখনই ফেরা যায় না, যদিও
বা ফিরে যাওয়ার সুযোগ আসে তবুও মেনে নেওয়া যায় না। কারন স্বর্ণালীর মনে হয়েছিল ওই বয়সে যেটা খুব প্রিয় চাহিদা বা প্রিয়জন বলে মনে হতো পরবর্তী কালে তার গুরুত্ব কম হতে থাকে।সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনের নাম ই জীবন। চলমানতা হলো জীবন থেমে যাওয়া মৃত্যু।


Comments

  1. Darun Likecho I Tabe Kichu Kichu Typography Mistake Ache O Uccharan Gato Trutio Bartoman i Duti Drshti Bhangi Dia Er Byakkha Kara Jai I Taito Chitrangadar Posti - ke Tomar Lekhar Introduction Korlam I Katota Sathik Holo Bolte Parbo Na Bolbe Tumi I Proti Nari Puruser Bhitor Tar Sahojato Pobritti Guli Boyes Sandhir Sange Sange Poribortito Hoi , Ja Tumi Tomar Lekhar Bhitor Dia Prokash Kortechecho I Abar Protibandhokatar ( Samjik) Diktio Tule Dhorecho I Bindur Abosthano Tule Dhorecho ,Ja Par-Par Bosia Ekti Smriti Bijorito Sarol Rekhai Porinoti Labh Koreche I Setai Tomar Jeeban Rath . Churi Bhangar Bhitor Dia Supto Basonar Mrityur Anibarjota Tao Bolecho I Kintu Smriti Birajoman I Shubho Ratri I Ashis Roilo Pathker Kalome . Bhalo Theko O Sakolke Bhalorekho I

    ReplyDelete
  2. Dhonnobad..Protiniyoto sange thakar jonno amake sathik rasta dekhanor jonno...Valo thakben..Good night

    ReplyDelete
    Replies
    1. Ami Ati Sadhran Shreneer O Sadharon Moddhyabitto Poribarer Bhitor Dia Bere Otha Simito Shikkhar Porichoi Bahok . Tomar Mato Shikkha Grohoner Sujog Ba Artho Bal Amar Chilona I Shoishab Keteche Ekti Sathik Rajnoitik Bhab Dharar Bhitor Dia ,Ja Ajo Bartoman I Baba Chilen Deputy Magistrate Deputy Collector .Desh Potrikar Dharabahik Lekhak .Barite Chilo Pathon Pathaner Poribesh . Amra Dui Bhai I Ami Baro I Choto Bhai Aeronautical Engineer I Bon SDO Clerical Staff Murshidabad Jelai I Ami Dak Bibhager Pati Kerani . Manuser Sange Thakatai (Uddeshyo Bytirekhe) Amr Charitrik Dharmo I Aneke Abar Setake Apobyakkhai Porinato Kare . Prokito Shikkha Grohonkaree-ke Rasta Dakhate Hoi Na . Nijaswatar Bhitor Dia Upolobhddhi Kare What Is Right Or Wrong . Satya Mittha Jani Na Tumi Kar Andure Boudi, Tumi amar Kanya Sama I Tomar Proti Amar Ashirbad Shatoto Borsito Habe Eta Byakto Korte Pari . "Aponi" Sambodhanta Pitritullyo Ke Na Korlai Bhalo Hoi . Shubho Ratri , Sakole Bhalo Theko iI

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

It's your love.....

UNWANTED LOVE WITH A UNKNOWN PERSON

Amar brishti bheja meye....