VICTORIA COTTAGE HOUSE

VICTORIA COTTAGE HOUSE


1985 সাল, ডিসেম্বর মাস 24শে তারিখ প্রচন্ড ঠান্ডা, বাইরে কনকনে শীত। রাতের বেলা ঘন কুয়াশা বাইরে রাস্তায় গাড়ি র সংখ্যা কম। এরকম এক অবস্থায় বাড়ির বাইরে বেরোনোর কথা ভাবাই যায় না, কিন্তু দরকার থাকলে বেরুতে হয়। তিতলি,বীথি ,রাখি,অর্নব মলয়,শুভ ও রাকেশ ওদের ব্যাপারটা অন্য, তাদের অল্প বয়সের জোশ আলাদা রকম। ওরা সব কলেজের 1st year স্টুডেন্ট। Educational excursion এর জন্য তারা মুর্শিদাবাদ যাচ্ছে। তাদের 15 জনের টিম সঙ্গে দুজন টিচার। এদিক টার রাস্তা ঘাট একদম অনুন্নত,
তাই গাড়ি বেশি জোরে চালানো যায় নি। ওরা সকলে উৎসুক হয়ে বসে আছে কখন পৌঁছাবে মুর্শিদাবাদ। রাত হয়ে আসছে,ওরা চাইছিল যতটা তাড়াতাড়ি পৌঁছানো যা
কিন্তু হঠাৎ ওদের গাড়িতে  একটা বিকট আওয়াজ হয়ে
গাড়িটা থেমে গেলো। রাত তখন প্রায় সাড়ে নটা, জন মানুষ শূন্য একটি রাস্তা। ওদের ভয় করতে লাগলো  ড্রাইভার নীচে নেমে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো কি অসুবিধা হলো গাড়িতে, কিন্তু সে কিছু খুঁজে পাচ্ছিলনা। তিতলি বীথি, অর্নব মলয় দের চিন্তা বাড়তে লাগলো। একে এত রাত তার উপরে সারাদিনের ধকল সব মিলে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি। বিভিন্ন কথা আলোচনা করতে লাগলো হঠাৎ এর মধ্যে তারা দূরে একটি আলো দেখতে পেলো,তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ওরা কিছু
বুঝতে পারছে না, সবাই সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগলো। ক্ষীণ আলো টি আরো বেশি স্পষ্ট হতে লাগলো
ওরা ভয় ও উৎকন্ঠার সঙ্গে অপেক্ষা করছে গাড়ির মধ্যে
সেই সময় তারা দেখলো একজন খর্ব কায় বৃদ্ধ মানুষ জীর্ণ শরীর হাটতে কষ্ট দেখলেই বোঝা যাচ্ছে,  হাতে
হারিকেন নিয়ে তাঁদের দিকে এগিয়ে আসছে। তিনি এতটাই বৃদ্ধ যে ভালো করে চোখে দেখতে পায় না,আর
চলতে ও কষ্ট। তারা ভাবলো সে এত রাতে এখানে কি করছে? যাইহোক সে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলো। বাবু আপনাদের কিছু সাহায্য করতে পারি,সে বলল….
মলয় বললো, মানে আমাদের গাড়িটা খারাপ হয়েছে
মনে হচ্ছে, আশেপাশে কোনো হোটেল আছে ? মলয়ের
কথা শুনে বৃদ্ধ মানুষটি দান দিকের একটি রাস্তার দিকে
ইশারা করলো আর বলল কিছুদূর হেঁটে গেলেই একটি
পুরানো কটেজ দেখতে পাবে ‘VICTORIA COTTAGE
HOUSE’. এই বলে বৃদ্ধ মানুষ টি অন্তর্ধান হয়ে গেল।
ওরা সাতজন দিক বিদিক না পেয়ে ডান দিকের রাস্তা বরাবর হাঁটতে শুরু করলো।অন্ধকার ঘুটঘুটে রাস্তা দু ফুট সামনে কিছু দেখাচ্ছে না, ওরা কোনো মতে হাঁটতে
লাগলো। প্রায় দু কিলোমিটার চলে এসেছে, ওরা তাও
কিছু দেখতে পাচ্ছে না,তিতলির পায়ে অনেক্ষন থেকে ব্যাথা সে র হাঁটতে পারছে না। হটাৎ রাকেশ চিৎকার করলো ওই যে একটা আলো দেখতে পারছি, সঙ্গে অর্নব
ও বলে উঠলো সত্যি একটা হোটেল এর মত কিছু দেখাচ্ছে।
হাড় হিম করা ঠান্ডায় তারা এসে পৌছালো একটি বহু বছরের পুরনো ব্রিটিশ পিরিয়ড এ তৈরি কাঠের কটেজ
বিশাল উঁচু দেয়াল গুলি,জানালা গুলি সব বড়ো বড়ো।
কিন্তু এতটাই পুরানো দেয়াল থেকে রং খসে পড়েছে। পাশে একটি জলের পাতকুয়ো রয়েছে, যার জল ব্রিটিশ আমলে ব্যাবহৃত হতো বলে মনে হচ্ছে।  কিন্তু কটেজে ঢুকেই তারা ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো….
সেই খর্ব কায় বৃদ্ধ মানুষ টি তাদের আগেই কি করে সেখানে পৌঁছে গেল ওরা কিছুই বুঝতে পারছে না। অর্নব বলেই ফেললো দাদু তোমাকে তো রাস্তায় দেখলাম তো আমাদের আগে কিকরে এখানে চলে এলে? যাই হোকওরা র মাথা ঘামাতে পারছিল না, সবাই ক্লান্ত রিসেপশন এ সাইন করে রুমের চাবি নিয়ে দুজন দুজন করে শিফট হইয়ে গেল। কটেজের ম্যানেজার তাদের আগেই সাবধান করে দিলো, রাতে যেন কেউ বাইরে না বেরোয়। কোনো আওয়াজ শুনে ও না।বার বার করে সাবধান করে দিলো।ম্যানেজার এর কথা ওরা কিছু বুঝতে পারছে না, ওদের চোখে উৎসুক ভরা চাহুনি। অর্নব ভীষন সাহসী সে মানতে পারলো না, মেয়েরা তিল সব ভীতু,তারা একবারেই মেনে নিল শুধু রাখি ছাড়া, কারণ সে খুবই সাহসিনী। ছোট বেলায় একবার চোর ঢুকলে সে সাহসিকতা দেখিয়ে একেবারে সামনে চলে গিয়েছিল।
সেই ব্যাপার টা তার মধ্যে কম বেশি রয়েছে। তাই সে ও মানতে পারলো না। তাই ঠিক করলো যদি কোনো শব্দ
ওরা শুনতে পাই তবে অর্নব আর রাখী ই বাইরে বেরোবে
যাইহোক ভীষণ ক্লান্তির পর রাতে গরম ভাত র দেশি মুরগির ঝোল পেয়ে সব খাওয়া দাওয়া করে যে যার ঘরে চলে গেল।কিন্তু ম্যানেজার এর কথাটা কেউ ভুললো
না।
যাইহোক রাত এখন গভীর, সবাই ক্লান্ত তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো। কতক্ষন ঘুমিয়েছে জানে না, কিন্তু হঠাৎ
বিকট শব্দে অর্ণবের ঘুম ভেঙে গেল সে মলয় কে ডাকতে লাগলো কিন্তু মলয়ের কোনো সাড়া নেই,সেই
আওয়াজ টি আবার।ও বুঝতে পারছে না কিসের কিন্তু
ভয়ঙ্কর, যেই বাইরে বেরোতে যাবে অমনি ম্যানেজার এর
কথা মনে পড়লো। কিন্তু তাতে র কি অর্নব বেরিয়ে এলো
আর এদিকে তিতলি রাখি ওরাও শুনেছে কিন্তু বাইরে বেরোনোর সাহস নেই। কিন্তু বাইরে আসার পর কোনো
আওয়াজ নেই, অন্ধকারে কিছু দেখতেও পাচ্ছে না ওরা।
মুহূর্তে বিকট একটি শব্দ করে কি যেন একটা কাঠের পাটাতনের উপর দিয়ে চলে যেতে শুনলো ওরা কিন্তু কিছু দেখতে পেলো না। ওরা আওয়াজ তা যেদিক থেকে
এসেছে সেদিক লক্ষ্য করে ছুটতে শুরু করলো,কিন্তু কোথায় কি গভীর জঙ্গল চারিদিকে,অন্ধকার কে আসবে এই রাতে কিছু বুঝতে পারলো না।কিন্তু সবাই
মোটামুটি বুঝে গেল কিছু একটা ছিল বা আছে….
যেটা ওরা চোখে দেখতে পারছে না।
রাতটা যেভাবে হোক কেটে গেল, পরদিন সকালে যখন
কটেজের বাইরে এলো,মলয় দেখলো বিশাল বড় একটি অশ্বথগাছ এর ডাল ভেঙে পড়ে আছে কুয়োর কাছে।
কেয়ার টেকার কে সব জানানোর পর সে বলল আপনাদের আগেই মানা করা হয়েছে, শোনা যায় প্রেতাত্মা যখন চলে যায় নাকি সে চিহ্ন রেখে যায়।জানি
না এটা কি ছিল, কিন্তু এখানে বহু যুগ আগে যখন এটি
কোনো ইংরেজ সরকারের কর্মচারী র কোয়াটার ছিল,
এখানে একটি ব্রিটিশ পরিবার বসবাস করত। কর্তার
অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গিন্নি ওই কুয়ো তেই ঝাঁপ
দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। কিন্তু শোনা যায় তার নিজের পরিবারের প্রতি দুর্বলতা তাকে দূরে যেতে দিচ্ছে না, অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে এই বাড়ির চারপাশে।
সেই জন্য প্রত্যেকটি অমাবস্যার রাতে  সে একবার করে
আসে….আর সত্যি সত্যি কাল ছিল সেই অমাবস্যারই রাত। এই ঘটনা তাদের মন কে অসম্ভব ভাবে নাড়া দিয়েছিল, তারা মনে করতো ভূত বলে কিছু নেই।

কিন্তু কিছু অলৌকিক ঘটনা এখনো এমন ঘটে যায় যার
কোনো ব্যাখ্যা হয় না, যার কোনো ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিতে পারে না। সব সময় সব কিছু লজিক দিয়ে প্রমান করতে
পারিনা আমরা। এটাই আমাদের ব্যর্থতা, হয়তো যুক্তি তর্ক দিয়ে অনেক সময় যেতা যায়, কিন্তু সেদিনের ওই
ঘটনার কোনো ব্যখ্যা নেই কেন সকালে অশ্বথাগাছ এর
মোটা ডাল টা ভাঙা ছিল। কোনো ঝড়বৃষ্টি ছাড়াই কি করে সেদিন একটি কাঁচা ডাল ভেঙে পড়লো।
তাই মনে হয় লোকে বলে….বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে
বহুদূর। যেমন ভগবান কে আমরা দেখতে পাই না শুধু
বিশ্বাস করি,তেমনি আত্মার ও অস্তিত্ব রয়েছে আমরা
চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু মাঝে মাঝে হয়তো অনুভব
করতে পারি। যার কোনো আকার নেই, সে নিরাকার
হয়েই রয়ে যায়।

শুভরাত্রি বন্ধুরা, ভালো থেকো।










Comments

Popular posts from this blog

It's your love.....

UNWANTED LOVE WITH A UNKNOWN PERSON

Amar brishti bheja meye....