JIBNER GATIPATH

জীবনের গতিপথ


1870 সাল, ফ্রান্সের একটি ছোট্ট গ্রাম কোলমার (Colmar)। খুব সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা ছবির মত একটা
গ্রাম কোলমার, যেটা ফ্রান্সের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত।এখানে জনসংখ্যা স্বল্প, জার্মানী বর্ডার পাশে। কলমার নামটি এসেছে কোলম পাহাড় এর নাম
অনুসারে। আবার অনেকে মনে করেন, (cole)
কয়লার পাহাড় হওয়ার জন্য গ্রামের নাম কোলমার।
এখানে পৃথিবী বিখ্যাত ওয়াইন পাওয়া যায়।প্রসিদ্ধ ওয়াইন এর জন্য খ্যাতি আছে জায়গাটির।
ছোট্ট সুন্দর গ্রাম কোলমার, যেখানে যোসেফ সাইমন আর গ্রেসী সাইমন এর সুখের সংসার এ জন্ম নিল ফুটফুটে একটি মেয়ে ফ্লোরিনা। সব মিলে ছোট সুখী পরিবার, যোসেফ কাজ করতো একটি সরকারি সংস্থা
তে, গ্রেসি গৃহবধূ। কিছুদিনের মধ্যে গ্রেসীর পুত্ৰ
সন্তান হেনরি জন্ম নিলো। ফ্লোরিনা তখন পাঁচ বছর।
দেখতে দেখতে হেনরি ও বড় হয়ে যায়। কিন্তু সুখ কখনই
চিরস্থায়ী হয় না, এ ক্ষেত্রেও হলো না। কিছু বছর
কেটে যাওয়ার পর সংসারের চাপে গ্রেসী র শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো ভিতরে ভিতরে। সে হটাৎ গুরুতর
অসুস্থ হয়ে পড়ে এক অজানা জ্বরে, চিকিৎসা য় কাজ
হলো না মাত্র এক মাসের জ্বর এ তিনি মারা গেলেন।
ফ্লোরিনা মাত্র পনের বছর আর তার ভাই হেনরি মাত্র
দশ বছর। দুটি সন্তান কে নিয়ে পিতা যোসেফ দিশাহারা।
মাতৃহারা ছেলে মেয়ে দুটি কে নিয়ে কিছুটা হলেও যোসেফ সামলাতে সক্ষম হন।বাস্তব বড় কঠিন তুমি যে
পরিস্তিতি তেই পড়, তোমাকে মানিয়ে নিতে হবে এর নাম
জীবন। সময়ের সঙ্গে তারা স্বাভাবিক হতে শুরু করে,
যোসেফ ও পরিস্থিতি সামলে নেই নিজের মতো। কিছু
দিন যেতেই যোসেফ তার অফিস কলিগ মিলা লুইস
নামে এক সুন্দরীর প্রেমে পড়ে যান, তারা খুব তাড়াতাড়ি
বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। মাত্র এক দিনের পরিচয় এ ফ্লোরিনা ও হেনরি তাকে মা বলে মেনে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু সমস্যা থেকেই যায় ফ্লোরিনা র জন্য
সমস্যাটা ছিল আরো বেশি। যথারীতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে
ফ্লোরিনা বয়ঃসন্ধি পার করে যুবতী হয়ে ওঠার দিকে।
সে আঠারো বছর বয়সী সদ্য ফোটা ফুলের কুড়ি। সে
দিনে দিনে ভীষন সুন্দরী হয়ে উঠছে,অনায়াসে সকলের
নজর কাড়ে, সে কিছুটা তার মায়ের মতন দেখতে। ফর্সা
গায়ের রঙ,সোনালী চুল,হালকা নীল চোখের মণি ও পান পাতার মতন মুখমন্ডল সব মিলিয়ে পরীর মতন
সুন্দরী ফ্লোরিনা, অপূর্ব সুন্দরী সে একবার তাকে দেখে
চোখ ফেরানো দায়।
যাইহোক সময়ই সমস্যার সঠিক সমাধান করে, এরমধ্যে
জোসেফের অফিসে একজন নতুন কলিগ জয়েন করে
আলেক্স মার্টিন। উঁচু লম্বা, গায়ের রঙ ফর্সা মুখমণ্ডলে
এক প্রশস্তির ছায়া। মিষ্টি কথা বলে অনায়াসে মানুষের
মন জয় করে নিতে পারে, যোসেফর সঙ্গে বয়সের অনেক পার্থক্য হওয়া সত্ত্বেও দুজন ভালো বন্ধু হয়ে গেল
অল্প দিনের মধ্যে কাজের প্রয়োজনে কখনো কখনো
যোসেফর বাড়িতে ও যেতে হতো আলেক্স কে।
সেইসময় হটাৎ একদিন আলেক্স এর চোখ পড়ল ফ্লোরিনার দিকে, ফ্লোরিনা কে দেখে সে নিজেকে ভুলে
গেল সে মনে মনে ভাবতে লাগলো কে এ কোনো স্বর্গের
দেবী ? এত সুন্দরী কেউ হতে পারে তার জানা ছিলো না,
কি দুর্বার আকর্ষণ, কি তীক্ষ্ণ চাহনি সে আগে দেখেনি।
মনে হয় প্রথম দেখাতেই সে প্রেমে পড়ে গিয়েছে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে সে ফ্লোরিনার মধ্যে। সে জানে
না তাকে চেনে না তাকে, তাও কি জানি এই বোধ হয় love at first sight. ফ্লোরিনা কিন্তু বুঝতে পেরেছিল
আলেক্স এর অবস্থাটা, সে কিছু না বলে চলে গিয়েছিল।
সেদিনের পর থেকে আলেক্স নিজের আগ্রহে আরো বেশি করে যোসেফ এর বাড়িতে আসতে লাগলো,নানা
রকম বাহানায় ফ্লোরিনা কে দেখার চেষ্টা করতো, কখনো
তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতো কখন তার মায়ের সঙ্গে
শুধু ফ্লোরিনর সঙ্গেই তার আলাপ তা জমে ওঠেনি। যাই
হোক কিছু দিনের মধ্যে সে ব্যবস্তা ও হয়ে গেল,দু এক কথায় তারা বন্ধু হয়ে গেল। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, কিন্ত ভালোবাসার কথা বলা হয়নি আলেক্সের, আলেক্স মারিয়া একবার ফ্লোরিনা কে তার ভালোবাসার কথা জানায় ও ফ্লোরিনা তাকে স্বীকৃতি দেয় । হটাৎ একদিন দুপুরে যখন আলেক্স তাদের বাড়িতে এলো,তখন বাড়িতে কেউ ছিল না শুধু
আলেক্স ও ফ্লোরিনা। ভাই হেনরি তখন বন্ধুর বাড়ি,আর ফ্লোরিনার মা তখন বাইরে। আলেক্স এসে সোজা ফ্লোরিনার ঘরে ঢুকে গেলো সে দেখলো ফ্লোরিনা পিছন
ফিরে চেয়ার টেবিল এ বসে কিছু একটা করছে, সে চুপচাপ ঘরে ঢুকে ফ্লোরিনার কাছে চলে এলো সে বুঝতেও পারলো না, কানের কাছে মুখটি নামিয়ে এনে
ডাকলো ফ্লোরিনা ! ফ্লোরিনা ভয় পেয়ে প্রায় লাফিয়ে উঠে কিন্তু আলেক্স তাকে হাত ধরে বসিয়ে দেয়।সে আরো কাছে চলে আসে, ফ্লোরিনা কে বলতে দিলো না কিছু দুজনের চোখ অপলক দৃষ্টিতে দুজনকে দেখতে লাগলো।আলেক্স আরো কাছে চলে এসছে ফ্লোরিনার
মায়াবী চোখ যেন আরো বেশি মায়াবী হয়ে উঠেছে আজ
গভীর দৃষ্টি দুজনকে বেঁধে ফেলে, দুজনের গরম স্বাস প্রশ্বাস বুকের মাঝে ঝড় তোলে, ঝড়ের দমকা হওয়ার
মাঝে তাদের হারিয়ে যাওয়ার দিন।হারিয়ে যায় তারা দূর
হতে দূর সুদূরে….যেখানে নেই কোনো দুঃখ কষ্ট যন্ত্রনা..
আছে ভালোবাসা শুধু ভালোবাসা। একে ওপরকে স্বজরে জাপটে ধরে এলোপাথাড়ি চুম্বন করতে থাকে,
আলেক্স তখন দিশাহারা সে ফ্লোরিনার নরম গোলাপের
পাপড়ির মতো ঠোঁটে নিজের তীক্ষ্ণ অস্তির ঠোঁট দুটি দিয়ে গোলাপের সব আভা একবারে শুষে নিতে চেষ্টা করে। নিজের শক্ত হাতে ফ্লোরিনা কে যেন পিষে ফেলে
হাঁফিয়ে ওঠে ফ্লোরিনা আলেক্স যেন আস্ত অজগর একটা তাকে জাপটে ধরেছে, সে চেষ্টা করেও নিজেকে  মুক্ত করতে পারছে না। সে ভালই বুঝতে পারছে তার চেষ্টা বৃথা, আজ তাকে সামলানো যাবে না।ফ্লোরিনার
ভয় লাগতে থাকে, সে বোঝে না কি করবে… জানে না
তারা কতক্ষন এভাবেই কেটে গিয়েছিল সেদিন, ঘোর
কাটলো যখন হেনরির কথা কানে এলো।তারা চকিতে
নিজেদের সামলে নিলো।
সেদিনের পর থেকে তারা আরো বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে মেলা
মেশা করতে লাগলো। কিছু দিন এভাবেই কেটে গেলো।
দুজনে বুঝতে পারছিল যে, দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে
পারবে না। ফ্লোরিনা যেহেতু বয়স খুব অল্প তাই তারা এখনই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলো না, কিন্তু মানুষ ভাবে এক হয় আর এক, যথারীতি তাদের ও তাই হলো । হটাৎ একদিন ফ্লোরিনার সৎ মা তাদের আপত্তিকর পরিস্থিতি তে দেখতে পারলেন, সে খবর যোসেফর কানে পৌঁছতে
দেরি হলো না, সে ভীষন রেগে গেলেও মা মারা মেয়েটির
দুঃখ বুঝলো, তাই তিনি আপত্তি করলেন না আরএকটি
শুভ দিন দেখে চার্চে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দিলেন সেই বছর এই। মা মরা মেয়েটি আলেক্স এর ভালোবাসা পেয়ে জীবন তার পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। দুজনে সুখের আর
ভালোবাসার একটি ছোট্ট সংসার গড়ে তোলার চেষ্টা
করলো।
বিয়ের দু বছর পর তাদের একটি সুন্দর মেয়ে সোফিয়া
আর জন্ম হলো। সমস্যা টা শুরু হলো সোফিয়ার জন্মের
পর থেকে প্রথমে সব ঠিক ছিল কিন্তু ধীরে ধীরে সব কিছু পরিবর্তন হতে থাকে। ফ্লোরিনা যখন একটি কাজে
যোগ দেয় তখন তাকে অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতে
হতো, ঘরে ফেরার পর আলেক্স এর সঙ্গে কথায় কথায়
অশান্তি হতে শুরু করে কখনো দেরিতে বাড়ি ফেরা তো
কখনো মেয়ে সোফিয়া কে নিয়ে বিভিন্ন কারনে ঝগড়া
লেগেই যেত। ফ্লোরিনর মনে হতে লাগলো আলেক্স আর
আগের মতো তাকে ভালোবাসে না, হয়তো অন্য কাউকে
পছন্দ করে সে। দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। বাইর
এ দুজনেই বেশি সময় কাটাতে থাকে, মেয়ে সোফিয়া আয়ার কাছেই বড় হতে থাকে।
দিন দিন ফ্লোরিনা এক চরম অসহনীয় পরিস্থিতি তে পরে, সে তার অফিসিয়াল কাজে বিদেশে যাওয়ার কথা
বললেই আলেক্স অনুমতি দেয় না। ফলে সে আলেক্স কে
না জানিয়ে মেয়ে সফিয়াকে তার বাবার কাছে ফেলে
একেবারে চলে যায়। আলেক্স অনেক খোঁজখুঁজি করে
হল ছেড়ে দেয়। ফ্লোরিনার আর কোনো খবর সে পাই নি।
কিছু বছর কেটে যাওয়ার পর ফ্লোরিনা একটি চিঠি
লেখে তার স্বামীর কাছে জার্মানি থেকে। সে ওখানে
একটি নাটক এর সংস্থায় কাজ করে,সেখানে সে নিজের
পরিচয় দিয়েছেন রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে। তার ছোট
বেলা থেকে folk dance এর একটা দক্ষতা ছিল, সে সেটাকেই কাজে লাগলো ও আরো বেশি করে নাচের
মধ্যে ডুবে গেল,প্রচুর টাকার নেশায় সে যা খুশি করতে
লাগলো, সে বড় ব্যবসায়ী দের নিজের ফাঁদে ফেলতে লাগলো শরীর দেখিয়ে, প্রলোভীত করতো তাদের।
তার জীবনের দুটি সর্বনাশী নেশা তাকে ধংসের পথে নিয়ে যেতে লাগলো। সে দিন দিন আরো বেশি টাকার খেলায় মেতে উঠলো। সুপুরুষ ও বিত্তবান এই ছিল তার
নেশা, ফ্লোরিনা এখন নতুন নামে পরিচিত নাতাশা। এই নামে তাকে সকলে জানে, সে এতটাই উগ্র স্বভাবের হতে
লাগলো স্টেজ শো করার সময় সে একটা একটা করে
দেহের পোশাক খুলে দর্শকের দিকে ছুড়ে ফেলতো।
এটা ছিল তার নৃত্য প্রদর্শনী র বিশেষ আকর্ষণ।
এই ভাবে নাতাশা প্রচুর টাকার মালিক হতে লাগলো।
দেশে বিদেশে একই ভাবে খ্যাতি ছড়াতে লাগলো তার।
এরই মধ্যে একজন ফরাসী যুবক লুকাস মাথ্যেও এর
প্রেমে পড়লো নাতাশা। যে কিনা তার থেকে বয়স এ দশ
বছরের ছোট ছিল। নাতাশা তখন চল্লিশ আর লুকাস ত্রিশ, দুজনের মধ্যে গভীর প্রেম। নাতাশা নিজের
প্রেমীক এর প্রতি এত টাই অনুরাগী হয়ে উঠলো যে সে
তার খ্যাতি তার পয়সা সব কিছু ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত
হয়ে গেল। তার মনে শুধু লুকাস এর জন্য ভালোবাসা ছিল সেই মুহূর্তে আর কিছু সে ভাবতো না।
লুকাসের প্রেমে পড়ে পাগল হয়ে যেতে লাগলো সে, তার
মনে হতে লাগলো লুকাস কে বিয়ে না করলে সে বাঁচতে
পারবে না। এখন নাতাশা আবার একবার ফ্লোরিনা হয়ে
লুকাসের সঙ্গে ঘর বাঁধতে চাইলো।
কিন্তু ভবিতব্য অন্য কিছু বলে, লুকাস ছিল ভীষন চতুর
সে শুধুমাত্র নাতাশার পয়সা ও সম্পত্তি কে ভালোবেসে
ছিল। নাতাশা কে নয়, নাতাশা ওরফে ফ্লোরিনা কিন্তু
ভুল করেও বুঝতে পারে নি সেটা । সে বিশ্বাসঘাতকতার
স্বীকার হয়েছিল। সে বুঝতে পারলো না, সে জানতে পারলো না যতক্ষণ না সব কিছু শেষ হয়ে গেল।
লুকাস তার সব সম্পত্ত্বি  টাকা পয়সা সব কিছু লুঠ করে
ফ্রান্সে পালিয়ে গেল। আর কোনো দিন তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলো না, নাতাশা বুঝতে পারল
লুকাস তাকে কোনো দিন ভালোবসে নি শুধু ব্যাবহার করেছে মাত্র, সকল পুরুষের প্রতি তার ঘৃনা জন্ম নিল।
ভালোবাসায় যখন মানুষ বঞ্চনার স্বীকার হয়, তখন
ভালোবাসা অভিশাপ এ পরিণত হয়।

পুনশ্চঃ  যখন একটা একটা সময় ছিল সে আলেক্স কে নিজের মেয়ে ও পরিবার কে পিছনে ফেলে চলে এসেছিল, একবার তাদের কথা ভাবে নি। আজ
সেও তো ভালোবাসায় বঞ্চনার স্বীকার হলো। সব পেয়েও সব হারালো, তার জীবন একাকিত্বে ভরে গেল।


ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন আর সকলকে ভালো রাখুন।
শুভরাত্রি ….

   



Comments

Popular posts from this blog

It's your love.....

UNWANTED LOVE WITH A UNKNOWN PERSON

Amar brishti bheja meye....